নর্থ সিকিম ভ্রমণ // North Sikkim tour


   গরমে একটু শান্তির আশায় পাহাড়ের কোলে কয়েকদিন / গুরুদংমার হ্রদ / গালিচা পাতা ফুলের উপত্যকা ইয়ুম্থাং

            গ্যাংটকের প্রাণকেন্দ্র এম.জি মার্গের শর্টকাট রাস্তা বেয়ে উঠে তখন রীতিমত হাঁপাচ্ছি। বসার একটু জায়গা পেলে খুব ভাল হয় । এমন সময় স্থানীয় এক বয়স্ক ভদ্রলোক শুদ্ধ বাংলায় ‘বসুন’ বলাতে একটু চমকে উঠলাম। ভাবলাম ঠিক শুনলাম তো ! তবে ঠিক যে শুনেছি সেটা বুঝতে দেরি হল না। জগদীশ থাপা, পেশায় একজন সেনাকর্মী। দিন কয়েকের ছুটিতে বাড়ি এসছেন। কর্মসূত্রে বিভিন্ন জায়গায় গেছেন তাই বাংলাটা অল্পবিস্তর শেখার সুযোগ হয়েছিল। খুব কম সময়ের মধ্যেই আমাদের সখ্যতাটা গড়ে ওঠায় তিনিও তাঁর দীর্ঘ সেনাজীবনের অভিজ্ঞতার ঝাঁপি খুলে বসে পড়লেন। শ্রোতা হিসাবে আমি অবশ্য খুব খারাপ না। জানতে পারলাম, তাঁরা পাহাড়ের আবহাওয়ায় অভ্যস্ত তাই যে সব অঞ্চলে  অসম্ভব ঠাণ্ডা , অক্সিজেনের মাত্রা ভীষণ কম সেখানেই নাকি তাদের পোস্টিং বেশি হয়। দুঃখ করছিলেন, চেহারার মিল থাকায় তাঁদের অন্য জায়গার লোকেরা চীনের এজেন্ট বলে হেনস্তা করে । …. সত্যিই এত কষ্ট সহ্য করে দেশের সেবা করার পর এই  ধরনের মন্তব্য বড়ই মর্মদায়ক। এতক্ষণ আমার মনে নানা প্রশ্ন উঁকি মারছিল  , কিন্তু সব প্রশ্নেরই উত্তর যেন  নিমেষে পেয়ে গেলাম। সেই সৈনিক বীরের বিভিন্ন বীরত্বগাথা শুনে শ্রদ্ধায় নত হলাম, যিনি দু বছর পর অবসর নেবেন। আর আমার সেসময় মনে পড়ছিল দুদিন আগের সেই ভয়ঙ্কর ঠাণ্ডা ও উচ্চতাজনিত অসুবিধার কথা। চোখের সামনে শুধুই ভেসে উঠছিল সেইসব সেনাছাওনিগুলো, যেগুলো গত দুদিন ধরে উত্তর সিকিমের আল্পাইন পর্বতের গায়ে দেখে এসেছি।

নাগা ফলস (Naga Falls)
Enjoying his Tea

        গত এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে বীরভূমে যখন চাঁদিফাটা গরম তখন আমরা সাঁইথিয়া থেকে উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেসে নর্থ সিকিমের উদ্দেশ্যে রওনা দিই। সিকিমের ওদিকটায় যেতে হলে প্যাকেজ ট্যুর করে যেতে হয়। আমরাও সেইমতো সিউড়ি থেকে ট্যুর এজেন্সি মারফত সমস্ত ব্যবস্থা করেছিলাম। এন.জে.পি তে ঠিক সময়ে ট্যুরের গাড়ি হাজির হলেও আমাদের ট্রেন লেট ছিল তাই সেদিনটা আমাদের কোথাও যাওয়া হল না। গ্যাংটক পৌঁছে কিছুক্ষণ রেস্ট নিয়ে বেরোলাম শহরের প্রাণকেন্দ্র এম.জি মার্গের দিকে। সন্ধ্যের মায়াময় আলোকে শহরটাকে অপরূপ লাগছিল।  দূর পাহাড়ের গায়ে জ্বলা আলোগুলো দেখে মনে হচ্ছিল  ঠিক যেন রাতের আকাশের মিটমিটে তারা । সন্ধ্যেটা  আমরা ওখানেই কাটায়।

কালাপত্থর (Kala patthar)
কালাপত্থর(kala patthar)

        পরদিন সকাল ১১টা নাগাদ গ্যাংটকের বাজরা স্ট্যান্ড থেকে লাচেনের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লাম। দিনের শুরুটা সুন্দর রোদ ঝলমলে পেলেও পথে কোথাও কোথাও  অল্পবিস্তর বৃষ্টি হচ্ছিল। দূরে পাহাড় আর গাছের খাঁজে খাঁজে মেঘেরা তখন বাসা বেঁধেছে।   মেঘ-পাহাড়ের সে এক অপরূপ মেলবন্ধন । পথে পড়ল অজস্র জলের ধারা যা পাথরের গা বেয়ে বেয়ে পড়ছে। টিনটেক, মিনচু ঝরনা ছাড়াও ডিকচু ড্যাম, থেংগ ট্যানেল, নাগাফলস দেখলাম। আমাদের গাড়ি চালক তাসি ভুটিয়া বেশ মিশুকে। সামদুং, টুংগ, সিংগিক, মেয়ং, ছাতেং ছবির মত ছোট ছোট সুন্দর পাহাড়ি গ্রামের নামগুলো জানতে পারলাম ওর কাছেই। দুপুরের খাওয়া মঙ্গানে সেরে  চুংথাং এলাম, যেখানে লাচেন চু আর লাচুং চু বলে নদীর সঙ্গম স্থল থেকে তিস্তা নদীর জন্ম হয়েছে। লাচেন (৮৮৩৮ ফুট) পৌঁছাতে  বিকেল ৫টা হয়ে গেল। সন্ধ্যা নামতে অবশ্য বেশি সময় লাগল না। লাচেন (অর্থ-বিগ পাস) গ্রামটা ছোট্ট ও ছিমছাম । গাংটক থেকে এর দূরত্ব ১২৯ কিলোমিটার । সারা বছর প্রায় বরফে ঢাকা থাকলেও বসন্তে আর বর্ষাতে ফুল ফোটে। সিকিমে পঞ্চায়তি ব্যবস্থা চালু থাকলেও অতি উচ্চতার কারনে লাচেন ও লাচুং এর গ্রামগুলোতে এখনো ঐতিহ্যবাহী স্বশাসন প্রচলিত আছে। যাকে জুমসা’ বলা হয়।  প্রত্যেক পরিবারের একজন পুরুষ সদস্যকে নিয়ে তৈরি এই ‘জুমসার’ নিজস্ব নিয়মকানুন আছে যা অতি উচ্চতায় বসবাসকারী যাযাবর ড্রোকপাদের পশুচারণ থেকে শুরু করে গ্রামীণ বিভিন্ন সমস্যা, আচার- অনুষ্ঠানকেও নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। এর প্রধানকে বলে ‘পিপন ‘। সিকিমের চোগিয়াল রাজাদের সময় থেকে এই ব্যবস্থা বংশ পরম্পরায় চলে আসলেও বর্তমানে ভোটের মাধ্যমেই ‘পিপন’ নির্বাচিত হন।

           যাইহোক পরদিন আমরা ভোর ৫.১৫ নাগাদ কালাপত্থর ও গুরুডংমারের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়ি। কিছুদূর গিয়েই পাহাড়ের চেহারাগুলো কেমন যেন বদলে যেতে থাকল। ১৩০০০ হাজার ফুট উচ্চতায় আল্পাইন তৃণভূমিতে কাঠের ঘর ও সেনাছাওনি ঘেরা ছোট্ট পাহাড়ি গ্রাম থাঙ্গু। গ্রামটির পাস দিয়ে বয়ে চলেছে তিস্তা। লাচেন থেকে ১৭ কিলোমিটার দূরে চোপতা ভ্যালি । এখান থেকে  পর্বতশৃঙ্গের অসাধারণ ল্যান্ডস্কেপ দেখা যায়। উঁচু পাহাড়ের অনেক নীচে উপত্যকায়  নদী এঁকেবেঁকে বয়ে চলেছে ।  দূরে পাইন গাছের ফাঁকে তুষার ঢাকা পর্বতের চূড়া মনকে অন্য আনন্দ এনে দেয়। দৈনন্দিন জীবনের সমস্ত ক্লেশ হিমালয়ের স্নিগ্ধ হাওয়া আর মনোরম দৃশ্যে কোথায় যেন মিলিয়ে যায়।  ধূসর পাহাড়ের পাশে পাশে বয়ে চলা নদী এখানে সরু, অনেকটা  ঝরনার মতো। নুড়ি পাথরের উপর বয়ে চলা ফেনা জল রোদ পড়ে কোথাও সাদা-সবুজ কোথাও আবার আকাশের ছায়া পড়ে নীলাভ রঙে পরিবর্তিত হয়েছে।  কালাপত্থর (১৪,৮৫০ ফুট) যাওয়ার রাস্তা বেশ কিছুটা খারাপ । আমরা ধীরে ধীরে চড়াই এ উঠছি। পাহাড় এখানে ধূসর থেকে কালোতে পরিবর্তিত হয়েছে। খাঁজে খাঁজে বরফ। ঘননীল আকাশে তখন সূর্য আর চাঁদ একসাথে বিরাজমান। তার নৈসর্গিক দৃশ্য একপ্রকার বর্ণনার অতীত। পথে যেতে যেতে প্রকৃতির এই অভূতপূর্ব সৌন্দর্য প্রায় আধঘণ্টা ধরে উপভোগ করার পর সকাল ৮টা নাগাদ কালাপত্থরে পৌঁছালাম। তাসিভাই অরিও বিস্কুট রঙা পাহাড়টার কাছে নামিয়ে দিয়ে শীতল পরিবেশে একটু উষ্ণতার উদ্দেশ্যে চায়ের সন্ধানে চলে গেল। আমাদের তো প্রথম বরফ দেখা, তাই উত্তেজনায় সমস্তরকম কষ্ট ভুলে স্বেতশুভ্র পাহাড়ের কোলে এসে হাজির হলাম। এ জায়গায় পর্যটকের ভিড় খুব একটা ছিল না। বরফ নিয়ে খেললেও অনেকেরই উচ্চতাজনিত কষ্ট হচ্ছিল। আমরাও সঙ্গে কর্পূর, পোর্টেবল অক্সিজেন নিয়ে গেছিলাম ।

গুরুডংমারের পথে ।। Way to Gurudongmar
গুরুডংমারের পথে ।। Way to Gurudongmar

           কালাপত্থরের সুন্দর ভিউ দেখার পর বিখ্যাত হ্রদ গুরুডংমারের (১৭,৮০০ ফুট)দিকে রওনা দিলাম। ভারতের অন্যতম সর্বোচ্চ এই হ্রদটি বৌদ্ধ, শিখ, ও হিন্দুদের কাছে অত্যন্ত পবিত্র। বৌদ্ধ গুরু পদ্মসম্ভব এর নাম অনুসারে এর নাম হয়েছে। তিস্তা নদীর অন্যতম উৎস হ্রদটি নিয়ে প্রচলিত আছে বিভিন্ন লোককাহিনী । তিব্বতের মালভূমির সাথে সংযুক্ত হওয়ায় এই অঞ্চলটির সঙ্গে লাদাখের পার্বত্য সৌন্দর্যের  যথেষ্ট মিল আছে। থাঙ্গু থেকে এখানে যাওয়ার কিছুটা পথ খারাপ হলেও পরে সুন্দর পিচ রাস্তা। রুক্ষ পাহাড়ের মাঝে  সর্পিল রাস্তা চলে গিয়েছে। দূরে তুষারাবৃত পর্বতের চূড়া । কোথাও কোন জনবসতি নেই শুধুমাত্র পাহাড়ের ঢালে ইয়াকের দল চড়ে বেড়াচ্ছে। মাঝে মধ্যে শুধু ইয়াক কর্তার কাঠের ঘর নজরে আসে।  রুখা শুখা ধূসর পাহাড়ের গায়ে পড়েছে ভেসে বেড়ানো মেঘেদের ছায়া ।  প্রকৃতির এই রুক্ষ রূপেরও যে নিজস্ব এক আবেদন আছে …..এ কথা না মেনে উপায় নেই।  গাড়ি চালক তাসি  দূরে চিনের  সীমান্ত দেখাল। বেলা ১১টা নাগাদ আমরা হ্রদে এসে পৌঁছোয়। পান্না-সবুজ হ্রদের জলে তখন ছায়া পড়েছে তুষারাচ্ছাদিত পাহাড়ের। অবর্ণনীয় তার দৃশ্য। হ্রদের কিছুটা অংশ বরফ হয়ে আছে। তীব্র হিমশীতল হাওয়ায় হাত-পা তখন প্রায় অবশ হওয়ার জোগাড়। বাতাসে অক্সিজেনের মাত্রা অত্যন্ত কম থাকায় সকলেরই অল্পবিস্তর শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। বেশ কিছুক্ষণ থাকার পর আমরা হোটেলে ফিরে আসি। গরম গরম পাহাড়ি বাঁধাকপির তরকারি্ আর কষা মাংস খেয়ে এরপর রওনা দিলাম  লাচুং এর উদ্দেশ্যে ।

         পথে ছোটবড় নানা আকারের ওয়াটার ফলস, পাহাড়ের কোটরে ইতিউতি রঙবেরঙের কাঠের ঘর , স্কুল , প্রাথনা পতাকা , আর নানা পাহাড়ি বুনো ফুল দেখতে দেখতে একসময় ৯০০০ ফুট উচ্চতার পর্বতচূড়া ঘেরা লাচুং(অর্থ-ছোট গিরিপথ) গ্রামটিতে হাজির হলাম। তিব্বতীয় ও লেপচা অধ্যুষিত এই গ্রামটিতে রয়েছে সেনানিবাস। তিব্বত চীনের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার আগে পর্যন্ত এই পাহাড়ি গ্রামটি ভারত ও তিব্বতের বাণিজ্যিক কেন্দ্র ছিল। এখানে একটি মনাস্ট্রি ও হস্তশিল্প কেন্দ্র রয়েছে।

ইয়ুম্থাং ভ্যালি (Youmthag valley)
রডোড্রেনডন(Rhododrendon)
রডোড্রেনডন(Rhododrendon)

          লাচুং থেকে ২৫কিলোমিটার দূরে রয়েছে ইয়ুম্থাং, যা ‘ভ্যালি অফ ফ্লাওয়ারস ‘ নামে পরিচিত। সত্যিই তা অনন্য। এখানে রডোড্রেনডন ভরা উপত্যকায় যেন রঙের মশাল জ্বালানো। উঁচুতে ওঠার সময় খেয়াল করলাম , উচ্চতা অনুসারে লাল, বেগুনী, গোলাপি ও ক্রিম এই চার রকমের রডোড্রেনডন ক্রমানুযায়ী ফুটে আছে। ছোট ছোট বেগুনী রঙের ড্রামস্টিক প্রিমরোজ পুরো উপত্যকায় গালিচা পেতেছে। আশ্চর্য কমনীয় তার শোভা।  পাইন, ফার ,সবুজ ঘাস আর ফুলেদের মাঝে চড়ে বেড়াচ্ছে ইয়াক।  কিছু গাছের পাতা লাল আর হলুদ রঙের, কিছুর আবার পাতায় নেই , শুধু সাদা আর গোলাপি ফুলে ভরা।

জিরো পয়েন্টের পথে ।। Way to Zero point
ড্রামস্টিক প্রিমরোজ (Drumstick Primrose)
জিরো পয়েন্ট ( Zero point )

          পাহাড়ের পাকদণ্ডী বেয়ে উঠছি।  তাসিভাই আমাদের সাথে গল্প জুড়ে দিয়েছে। সামাজিক নানান রীতিনীতি শুনতে শুনতে আমাদের গাড়ি তখন ছুটে চলেছে ’জিরো পয়েন্টের’ পথে। ব্যাকগ্রাউন্ডে বাজছে স্থানীয় নানা গান। সব মিলিয়ে অন্য এক অনুভূতি। ‘জিরো পয়েন্টে’ও (১৫,৩০০ ফুট) ছিল তীব্র শীতল হাওয়া । তবে কোন শ্বাসকষ্ট হয়নি। তাই দীর্ঘ সময় এখানে কাটিয়ে  লাচুং ফিরে এলাম।

সেভেন সিস্টার ফলস (Seven Sisters Falls)

             গ্যাংটকে ফিরবার পথে পেলাম শিলাবৃষ্টি। কিছুটা নেমে আবার রোদ ঝলমলে নীল আকাশে পেঁজা তুলোর মত মেঘও ছিল। এককথায় সিকিমের এই ভ্রমনে বৃষ্টি ,মেঘ, রৌদ্রজ্জ্বল  ঘন  নীলাকাশ, বরফের চাদরে মোড়া পর্বত, উপত্যকা, জলপ্রপাত, নদী ,হ্রদ, সবুজ  অরণ্য, ফুলে ঢাকা  উপত্যকা —- -সব ছিল। একসাথে প্রকৃতির  রূপের এত বৈচিত্র্য আগে কখনও দেখিনি।

এনচে মনাস্ট্রির প্রেয়ার হুইল (Prayer wheel in Enche Monastery)
রাঙ্কা মনাস্ট্রি (Ranka Monastery)

                পরদিন তাই ঠিক করলাম গ্যাংটকের বিখ্যাত মনাস্ট্রিগুলো ঘুরবো। বিশ্বের তৃতীয়তম ধর্মের শিক্ষা ,সংস্কৃতি, নিয়ম-কানুন, আচার-অনুষ্ঠানকে কাছের থেকে উপলব্ধি  করতে সারাদিন আমরা মনাস্ট্রি দেখে কাটিয়ে দিলাম।  এখানকার সবচেয়ে প্রাচীন মনাস্ট্রি হল এনচে । আর বিশ্বের সবচেয়ে  বিখ্যাত বৌদ্ধশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অন্যতম  রুমটেক মনাস্ট্রিতে ‘কাগিউ শিক্ষাদেওয়া হয়। যা একপ্রকার বিশেষ বৌদ্ধশিক্ষার অন্তর্গত। এখানকার ছোট ছোট বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরা বেশ প্রাণচঞ্চল। বৌদ্ধধর্ম শিক্ষা ছাড়াও এদের  দর্শন, তিব্বতীয় ব্যাকরণ পড়তে হয়। মনাস্ট্রির ভিতরটা ছিল সিল্ক পেইন্টিং, ম্যুরাল ও মূর্তি দিয়ে সাজানো। এখানকার ধর্মগুরু কারমপা গুরু পদ্মসম্ভবের মূর্তি রয়েছে মনাস্ট্রিতে। গুরু পদ্মসম্ভব তিব্বতীয় ‘নিংমা’ ধারার প্রবর্তক ছিলেন। এখানকার ছোট্ট রেষ্টুরেন্টটিতে বৌদ্ধ লামাদের বানানো টিবেটিয়ান টি, থুকপা, জিঞ্জার লেমন টি ছিল অসাধারণ। তবে গ্যাংটকের সবথেকে সুন্দর  মনাস্ট্রি হল রাঙ্কাবলিউডের বিভিন্ন সিনেমার শুটিং হয়েছে এখানে। মনাস্ট্রির ভিতরে  স্বর্ণ নির্মিত বুদ্ধমূর্তির নিচে সারিবদ্ধ প্রার্থনারত বৌদ্ধ ভিক্ষুদের দেখে  মনে এক অন্য অনুভূতি জাগে। সম্পূর্ণ অন্য অপরিচিত এক জগতের সাথে পরিচিত হয়ে এক্কেবারে বাকরূদ্ধ হয়ে গেছিলাম।

রুমটেক মনাস্ট্রিতে প্রার্থনারত সন্ন্যাসী (Monks praying at Rumtake Monastery)

          পরদিন সকালে এম.জি মার্গে অশত্থ গাছের নিচে বসা সেনাকর্মীর সাথে পরিচয় ও তাঁর দীর্ঘ সেনাজীবনের অভিজ্ঞতা আমাদের ভ্রমণে এক অন্য মাত্রা এনে দিয়েছিল। পরিপূর্ণ এক তৃপ্ততা থাকলেও একরাশ মন খারাপ নিয়ে রাত্রে আমরা এন.জে.পি থেকে ট্রেন ধরি। তবে এখানকার পাহাড়ের সৌন্দর্যকে একবার দেখে পোষায় না। তাই মনে মনে পাহাড়কে কথা দিয়ে এলাম,  তোমার কাছে আবার আসব।