গ্যাংটকের বিখ্যাত মনাস্ট্রিগুলি// Femous monasteries in Gangtok


 

          শত সহস্র নিরীহ প্রাণীহত্যা এবং আচার সর্বস্ব ব্রাহ্মণ্য ধর্মের জটিল অনুশাসনে সাধারন মানুষ যে সময় অসন্তুষ্ট ঠিক সেই সময় এমনই এক সামাজিক পটভূমিতে সর্বত্যাগী, প্রচণ্ড ব্যক্তিত্বের অধিকারী ভগবান তথাগতের  ( সিদ্ধার্থ ) আবির্ভাব ঘটে। একজন রাজপুত্র হয়েও সকল প্রকার প্রলোভনকে জয় করে তিনি বুদ্ধত্ব লাভ করেছিলেন। ৬০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে বুদ্ধদেব   ( সিদ্ধার্থ ) দ্বারা একটি ধর্মীয় বিপ্লব শুরু হয় যা বৌদ্ধ মতবাদ বা বৌদ্ধ দর্শন নামে পরিচিত। বৌদ্ধধর্ম তার সার্বজনীন গ্রহণযোগ্যতার  কারনে এক অসাধারণ আন্দোলন তুলেছিল যা প্রাচীন ভারত তথা সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে এবং শিক্ষা ব্যবস্থার বিকাশের ক্ষেত্রে এক মুল্যবান ভুমিকা পালন করে। বিভিন্ন বৌদ্ধ মঠগুলি শিক্ষার বিকাশের ক্ষেত্রে আজও অগ্রণী ভূমিকা পালন করে চলেছে ।  বৌদ্ধধর্ম সংস্কৃতির আকর ও এই ধর্মাবলম্বীদের উপাসনাস্থল হিসাবে মনাস্ট্রি বা মঠগুলির গুরুত্ব এবং অবদান অনস্বীকার্য। সমগ্র সিকিম জুড়ে ছড়িয়ে আছে প্রায় ২০০ টিরও বেশি মঠ বা গুম্ফা। সিকিমের ধর্মসংস্কৃতিকে জানতে এবং উপলব্ধি করতে রাজধানী গ্যাংটকের সাইড সিয়িং ভ্রমন করার সময় এখানকার বিখ্যাত মনাস্ট্রিগুলো দেখার জন্য একটা দিন অবশ্যই হাতে রাখা উচিত।

 রুমটেক মনাস্ট্রি (Rumtek Monastery)    শুধুমাত্র প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মধ্যে বিরাজ করার জন্য নয় সিকিমের গুম্ফাগুলি বিখ্যাত তাদের ইতিহাস এবং স্থাপত্যশৈলীর কারনেও। গ্যাংটক থেকে ২৪কিমি দূরে সিকিমের ধর্ম সংস্কৃতির পীঠস্থান ঐতিহ্যময় রুমটেক মনাস্ট্রি অবস্থিত। এটি ১৭০০ দশকের মাঝামাঝি নির্মিত হয়েছিল। চতুর্থ চোগিয়ালের তৈরি মূল মনাস্ট্রিটি ভূমিকম্পে ধ্বংস হয়ে যায়, বর্তমানে এটি ধর্মচক্র কেন্দ্র নামেও পরিচিত। বুদ্ধদেবের মতাদর্শ সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তিব্বত চিনের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কারনে বহু ধর্মীয় গুরু  সিকিমে চলে আসলে সেই সময় হতে এই মঠটি অধিকতর গুরুত্ব লাভ করে। মঠটিতে প্রবেশ করতে গেলে দীর্ঘ চড়াই বেয়ে উঠতে হয়। দিনের শুরুতেই মঠটিতে পৌঁছে যেতে পারলে সেখানকার পাঠরত বৌদ্ধ শিক্ষার্থীদের প্রার্থনা শোনা যায়। এই মনাস্ট্রিটি বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত বৌদ্ধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অন্যতম। বৌদ্ধ শিক্ষার অন্তর্গত ‘’কাগিউ’’ শিক্ষা এখানেই প্রচলিত। প্রানচঞ্চল ছোট ছোট বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরা বেশ মিশুকে। তাদের সাথে অনায়াসেই গল্প জুড়ে দেওয়া যায় , ছবি তোলা যায়। ধর্মচর্চার পাশাপাশি তাদের বিভিন্ন শাস্ত্র অধ্যয়নও করতে হয়। মঠটি তিনতলা।  একটি  কলেজও আছে।

      পাহাড়ের ঢালে সবুজের পটভূমিকায় ঝকঝকে সোনায় মোড়া চূড়া, স্বর্ণচক্র, সোনার বুদ্ধ, মনিমুক্তোখচিত সোনার স্তূপ গুম্ফাটিকে করে তুলেছে ঝলমলে। প্রার্থনা কক্ষের দেওয়াল জুড়ে ম্যুরাল আর জাফরির কাজ এক স্নিগ্ধ পবিত্রতার রেশ যেন ছড়িয়ে দিয়েছে। এখানকার রেষ্টুরেন্টে লামাদের হাতে বানানো পদ্গুলির স্বাদ অসাধারন।

   রাঙ্কা মনাস্ট্রি (Ranka Monastery)- গ্যাংটক থেকে ২০কিমি দূরে এই লিংডম মঠ বা রাঙ্কা মঠটি অবস্থিত। মঠে ঢোকার মুখেই রয়েছে সার দিয়ে প্রার্থনা হুইল। গ্যাংটকে যে সমস্ত মঠগুলি রয়েছে তার মধ্যে এটি সবচেয়ে সুন্দর এবং নবীন। তরুণ লামাদের প্রশিক্ষণের জন্য এখানেও রুমটেকের মতোই শ্রেণীকক্ষ ও বাসভবন রয়েছে। প্রার্থনা কক্ষে বিশালাকার সোনার বুদ্ধের সামনে সার দিয়ে রয়েছে বই পড়ার জন্য নিচু টেবিল  । দেওয়ালে সুন্দর পেইন্টিংও থ‍্যাঙ্কারস ঝুলছে। প্রার্থনা গৃহের সামনেই রয়েছে বিশালাকার টিবেটিয়ান ড্রাম। বুদ্ধ মুর্তির নিচে জাজ্বল্যমান দীপের শিখা আর মঠের শান্ত পরিবেশে সন্নাসীদের  প্রার্থনা মন্ত্র উচ্চারণ মনে এক অন্য অনুভুতি এনে দেয়।

       এই মনাস্ট্রিতে বিভিন্ন বলিউড সিনেমার শুটিং হয়েছে।  গাড়ি পার্ক করার পাশে একটি উপহার সামগ্রির দোকান এবং  রেস্তরাঁ রয়েছে সেখানে অভিনেতা আমির খান দুপুরের খাবার খেয়েছিলেন।

   এনচে মনাস্ট্রি (Enchey Monastery) –   গ্যাংটক শহর থেকে ৩ কিমি  দূরে দুই  শতাব্দী প্রাচীন এনচে মঠটি অবস্থিত। বজ্রযান মতাবলম্বীদের উদ্দেশ্যে এটি নির্মিত। চিনা প্যাগোডার অনুকরণে নির্মিত মঠটিতে বুদ্ধদেব, পদ্মসম্ভব ও অন্যান্য ধর্মগুরুদের মূর্তি রয়েছে। জানুয়ারি মাসে মঠের লামারা মুখোশ নৃত্য ‘’ছাম’’ উৎসবে মেতে ওঠেন।

  গনজাং মনাস্ট্রি (Gonjang Monastery)-  শহর থেকে ৪ কিমি দূরে ৬০৬৬ ফুট উচ্চতায় এই মঠটি অবস্থিত। ১৯৮১ সালে গনজাং রিনপচে এটি নির্মাণ করেন। এখানে সন্ন্যাসী ছাত্রদের তিব্বতি ভাষা এবং ইংরেজির সাথে সন্ন্যাস শিক্ষাও দেওয়া হয়। স্থানীয় লোকদের ওষুধ সরবরাহ করার জন্য এখানে  একটি কমিউনিটি হেলথ কেয়ার সেন্টার রয়েছে।

      শহরের অতি সন্নিকটে হওয়ায় বিভিন্ন টুর প্যাকেজে এই মনাস্ট্রিটি পর্যটকরা দেখার সুযোগ পেলেও বাকি মনাস্ট্রিগুলি দেখার জন্য আলাদা প্যাকেজ করতে হয়। তবে সিকিম ভ্রমণে এলে এখানকার প্রকৃতিকে উপভোগ করার সাথে এখানকার সংস্কৃতিকেও  সম্পূর্ণ রূপে জানা উচিত ।


2 responses to “গ্যাংটকের বিখ্যাত মনাস্ট্রিগুলি// Femous monasteries in Gangtok”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *